Saturday, July 24, 2021

পরপারে চলে গেলেন ফকির আলমগীর

 পরপারে চলে গেলেন ফকির আলমগীর

আজ শুক্রবার (২৩/০৭/২০২১ইং) রাত ১০ঃ৫৬ মিনিটের সময় ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় মারা গেলেন ফকির আলমগীর (ইন্না-লিল্লাহে..............রাজিউন)।

ফরিদপুরের কৃতি সন্তান জনপ্রিয় গণসংগীত শিল্পি ফকির আলমগীর। মৃত্যু কালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও তিন ছেলে রেখে গেছেন।১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় দিনটিতে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোঃ হাচেন উদ্দিন ফকির, মা বেগম হাবিবুন্নেছা। ফকির আলমগীর কালামৃধা গোবিন্দ হাই স্কুল থেকে ১৯৬৬ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। জগন্নাথ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী নিয়ে পরবর্তী পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় এমএ পাস করেন। ১৯৬৬ সালে ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপের সদস্য হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও গণশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ষাটের দশকে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সঙ্গীত বলয়ে প্রবেশ করেন। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে শিল্পী একজন শব্দ সৈনিক হিসেবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন। ফকির আলমগীর ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও গণশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেব ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে তিনি যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। ১৯৯৯ সালে একুশে পদক পান ফকির আলমগীর।

ও সখিনা গেছোস কিনা ভুইলা আমারে, মন আমার দেহঘড়ি, মায়ের একধার দুধের দাম ইত্যাদি বহু জনপ্রিয় গানের নায়ক তিনি।

তাঁর গাওয়া ‘সান্তাহার জংশনে দেখা’,  ‘বনমালী তুমি’ ‘ কালো কালো মানুষের দেশে’,  ‘আহারে কাল্লু মাতব্বর’, ‘ও জুলেখা’সহ বেশ কিছু গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এর মধ্যে ‘ও সখিনা’ গানটি এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ১৯৮২ সালের বিটিভির ‘আনন্দমেলা’ অনুষ্ঠানে গানটি প্রচারের পর দর্শকের মধ্যে সাড়া ফেলে। কণ্ঠ দেওয়ার পাশাপাশি গানটির সুরও করেছেন ফকির আলমগীর। তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা। এ ছাড়া বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি, জনসংযোগ সমিতির সদস্যসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেছেন।

সংগীতের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য এ পর্যন্ত পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় ‘একুশে পদক’, ‘শেরেবাংলা পদক’, ‘ভাসানী পদক’, ‘সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড অব অনার’, ‘তর্কবাগীশ স্বর্ণপদক’, ‘জসীমউদ্‌দীন স্বর্ণপদক’, ‘কান্তকবি পদক’, ‘গণনাট্য পুরস্কার’, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক মহাসম্মাননা’, ‘ত্রিপুরা সংস্কৃতি সমন্বয় পুরস্কার’, ‘ঢালিউড অ্যাওয়ার্ড যুক্তরাষ্ট্র’, ‘জনসংযোগ সমিতি বিশেষ সম্মাননা’, ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড বিশেষ সম্মাননা’ ও ‘বাংলা একাডেমি সম্মানসূচক ফেলোশিপ’।

গুনী এই শিল্পীর আত্মার শান্তি কামনা করছি। 

ভালবাসার রূপালী সুর